Header Ads

মুভি রিভিউঃ ধনঞ্জয়

মুভি::ধনঞ্জয়
ডিরেক্টরঃঅরিন্দম শীল 
কাস্ট:: অনির্বাণ ভট্টাচার্য ,মিমি চক্রবর্তী
রিলিজ ডেট::১১ অগাস্ট,২০১৭
রানিং টাইমঃ ১৪০ মিনিটস  
একটা খুন, খুনের আগে ধর্ষণ, ভিক্টিমের শরীরজুড়ে একুশটা আঘাতের চিহ্ন, সন্দেহের তীর অ্যাপার্টমেন্টের দারোয়ানের দিকে। অভিযোগ এলো, আগে থেকেই নাকি অষ্টাদশী সেই কিশোরীকে বিরক্ত করতো অভিযুক্ত দারোয়ান। সে কোথায়? পালিয়েছে। দু'মাস বাদে নিজের বাড়ী থেকে ধরাও পড়লো পুলিশের হাতে। সাক্ষ্য-প্রমাণ সবকিছু তার বিপক্ষে, মৃত লাশের পাশে পাওয়া গেছে একটা জামার বোতাম, আর একটা গলার মাদুলী। প্রমাণীত হয়েছে, সেগুলোও সেই দারোয়ানের। পত্রিকায় রোজ রোজ নতুন কেচ্ছাকাহিনী বেরুচ্ছে, বলা হচ্ছে, ধনঞ্জয় নাকি ভিক্টিমকে আগে খুন করেছে, তারপর মৃতদেহের সঙ্গে শারিরীকভাবে মিলিত হয়েছে! পাবলিক ক্ষেপছে নিত্য, তাদের ঘরে চাল নেই, উনুনে আগুন নেই, পকেটে ফুটো কড়ি নেই, তবে গলায় জোর আছে, ঝোলাও ব্যাটা ধনঞ্জয়কে!
ঘটনাটা ১৯৯০ সালের। কলকাতার ভবানীপুর থানার পদ্মপুকুর রোডে আনন্দ অ্যাপার্টমেন্টের একটি ফ্ল্যাটে পাঁচই মার্চ বিকেল পাঁচটা নাগাদ হেথলা/হেতাল পারেখ নামে ১৮ বছরের এক তরুণীকে খুন করা হয়। গলায় রুমাল বেঁধে ফাঁস দিয়ে এবং মাথায় ভারি কোনো জিনিস দিয়ে ওঁকে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা হয়েছিল শুরুতে। নিহতের হাত পায়ের হাড়ও ভেঙেছে বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে। লাশের পরনে ছিল ছেঁড়া সায়া, ব্লাউজ। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, খুন করার আগেই ওঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ঘরের আলমারির দরজা ছিল খোলা। তবে কিছু খোওয়া গেছে কিনা জানা যায়নি শুরুতে, পরে হেথালের পরিবার অভিযোগ করে, দামী একটা রোলেক্স ঘড়ি চুরি গেছে ঘর থেকে। ঘটনার পরেই ওই অ্যাপার্টমেন্টের সিকিউরিটি গার্ড ধনঞ্জয় চ্যাটার্জি উধাও হয়েছিল। ঘটনাটা সেই সময়ে বেশ সাড়া ফেলেছিল কলকাতায়। কলকাতা শহরটা তখনও এতখানি বর্ধিত হয়নি, মফস্বল একটা ছাপ ছিল, পাড়ায় পাড়ায় কানাকানি হতো কিছু একটা ঘটলেই। সেই তুলনায় এটা তো তেলেসমাতি এক কারবার ছিল!
যাই হোক, ধনঞ্জয় ধরা পড়ে তার গ্রামের বাড়ী থেকে। ঘটনার দুই মাস পরে। এরপর কোর্ট কাছারীর চক্কর। একে একে সব সাক্ষ্য-প্রমাণ আসতে থাকে তার বিপক্ষে। ফ্ল্যাটে খুন, নিরাপত্তারক্ষী পলাতক- অভিযোগের আঙুল তার
দিকে ওঠাটাই স্বাভাবিক। তার ওপরে, কোন কোন সাক্ষীর জবানবন্দীতে এসেছে, ঘটনার সময়টায় ভিক্টিম ঘরে একা ছিল এবং ফোন করার অজুহাতে সেই ফ্ল্যাটে গিয়েছিল ধনঞ্জয়। যদিও সেটা ধনঞ্জয় অস্বীকার করেছে বরাবরই। কিন্ত সেটার সপক্ষে কোন যুক্তিও হাজির করতে পারেনি সে। যাই হোক, কোর্টরুমে ট্রায়াল চলেছে, একইসঙ্গে বাইরে পথেঘাটে আর খবরের কাগজে চলেছে মিডিয়া ট্র‍্যায়াল। শহর কলকাতায় তখন ধর্ষণের বিরুদ্ধে রোজ বিক্ষোভ হচ্ছে, সেই মিছিলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মূখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী স্বয়ং। ধর্ষকের শাস্তি দিতেই হবে, এমনটাই ছিল সবার ভাষ্য। ভালো কথা, আইন-আদালত তো আছেই মানুষের দাবী পূরণ করার জন্যে। দাবী পূরণ হয়ে গেল, ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো হলো ধনঞ্জয় চ্যাটার্জীকে। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাভিক্ষা করেও পার পায়নি সে, চৌদ্দ বছর জেল খাটার পরে ২০০৪ সালেএ পনেরোই আগস্ট, ভারতের স্বাধীনতা দিবসে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ধনঞ্জয়ের।
অরিন্দম শীল, কলকাতার সবচেয়ে সৃজনশীল পরিচালকদের একজন। ব্যোমকেশ সিরিজের জন্যেই মূলত বিখ্যাত, শবর সিরিজটাও তিনিই পরিচালনা করেন। 'ধনঞ্জয়' সিনেমায় বাস্তবটাকে ফিকশনের রূপ দিয়ে তিনি তুলে এনেছেন পর্দায়। দুইযুগেরও বেশী পুরনো একটা ঘটনার গোঁড়ায় যেতে চেয়েছেন ইতিহাসের পাতা খুঁড়ে। পরিচালনায় দারুণ মুন্সীয়ানার পরিচয় দিয়েছেন এই সিনেমাতেও। সরাসরি কোন রায় দেননি তিনি, একবারও বলেননি, ধনঞ্জয় চ্যাটার্জী নামের মানুষটা নির্দোষ ছিলেন। শুধু কিছু প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। বিচারকাজে হওয়া অজস্র অসঙ্গতি তুলে এনেছেন সেলুলয়েডে, আঙুল তুলেছেন কিছু ভিন্ন প্রেক্ষাপটের দিকে, আলো ফেলেছেন আঁধারে পড়ে থাকা কিছু সম্ভাবনার দিকে। খুন, নাকি অনার কিলিং? রেপ, নাকি সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স? কেন সাক্ষীদের জবানবন্দী মিলছে না? বয়ানে সময়ের হেরফের কেন? ধনঞ্জয় আসলেই খুনী, নাকি বলির পাঁঠা? দাবার বোর্ডে সাধারণ এক সৈন্য ধনঞ্জয়কে বিসর্জন দিয়ে কেউ মন্ত্রী বাঁচাতে চায়নি তো?
ধনঞ্জয় চরিত্রে অনির্বাণ ভট্টাচার্য ছিলেন দুর্দান্ত। পরাণ বন্দোপাধ্যায় মুগ্ধ করেছেন বারবার, যতোক্ষণ তাঁর উপস্থিতি ছিল, পর্দা থেকে চোখ সরানো যায়নি একবারের জন্যেও। কৌশিক সেনকে যতো দেখি, তত ভালো লাগে। এই মানুষটার মতো কনফিডেন্ট এক্টিং আর কেউ করতে পারেন না পুরো টালিগঞ্জে। এই সিনেমাতেও, প্রত্যেকটা সংলাপে ওর কনফিডেন্সটা ফুটে উঠেছে। আর মিমি চক্রবর্তী! এই মেয়ে যথেষ্ট আফসোস উপহার দিয়েছে।
মুভি টি দেখতে নিচের লিংক এ ক্লিক করেন  https://youtu.be/F9ytqWmzeD8

No comments

Powered by Blogger.