বেড়িয়ে আসুন সীতাকুন্ডে
আসসালামু আলাইকুম পাঠক বন্ধুরা।
চলছে শীতের মৌসুম,যদিও শীতের তীব্রতা তেমন নেই বললেই চলে, আর বছরের এ সময়টাই ঘুরে বেড়ানোর মোক্ষম সময়। আর আজকে তুলে ধরলাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আরেক ভান্ডার সীতাকুণ্ড এ ভ্রমন নিয়ে।
মেঘ ছোঁয়া সবুজ পাহাড়ের সাথে সমুদের মিতালি আর পাহাড়ের বুক চিরে বেরিয়ে আসা অসম্ভব সুন্দর প্রাকৃতিক ঝর্নার মেলবন্ধন যেখানে সেটা হল সীতাকুণ্ড। চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার উত্তরে যার অবস্হান। যে রূপে মুগ্ধ হয়ে কবি নজরুল লিখে ছিলেন তার সেই বিখ্যাত গান ‘আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমাই...’। সীতাকুণ্ড অপরূপ প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয্যের লীলাভূমি । সীতাকুন্ড বাংলাদেশের চট্রগ্রাম জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। এলাকাটি পাহাড়ি এবং অসম্ভব সৌন্দর্য এ ঘেরা পাহাড় আর পাহাড়ি ঝর্নায় পরিপূর্ণ। চলুন জেনে আসি তাহলে মন চাঙা করবার মত সীতাকুন্ডের দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে।
চন্দ্রনাথ পাহাড়
সীতাকুণ্ড বাজার থেকে ৪ কি.মি পূর্বে চন্দ্রনাথ পাহাড় অবস্থিত । পায়ে হেঁটেই যেতে অবশ্যই আপনাকে। কিন্তু পায়ে হেঁটে ভ্রমনের মজাই আলাদা, কারণ চন্দ্রনাথ পাহাড় শ্রেণীভূক্ত ছোট পাহাড় গুলো ব্যাসকুণ্ড থেকে শুরু হয়েছে। পাহাড়ে যাবার পথে চোখে পড়বে হিন্দুদের কিছু ধর্মীয় স্থাপনা। এই পাহাড়ি এলাকা নানা ধরনের গাছ-গাছালি, বুনোফুল এবং গুল্মলতায় পরিপূর্ণ। এখানে আপনি পেয়ারা, সুপারি, আম সহ বিভিন্ন ফলের বাগান দেখতে পাবেন।এখানে কিছু নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠীর মানুষও বসবাস করে, যারা ত্রিপুরা নামে পরিচিত এবং এখানে তাদের কিছু গ্রামও আছে। যদি পাহাড়ের গভীরে যান তবে পাহাড়ের গায়ে জুম চাষের খেত দেখতে পাবেন। গভীর পাহাড়ের ভেতরে বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য ফুলের বাগানও দেখতে পাবেন। অনেকগুলো ঝর্ণা আছে তবে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাবার পথে শুধু একটি মাত্র ঝর্ণা চোখে পড়বে, এখান থেকেই পাহাড়ে উঠার পথ দু ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে, ডানদিকের দিকের রাস্তা প্রায় পুরোটাই সিঁড়ি আর বামদিকের রাস্তাটি পুরোটাই পাহাড়ী পথ,তবে কিছু ভাঙ্গা সিঁড়ি আছে। বাম দিকের পথ দিয়ে উঠা সহজ আর নামার জন্য ডানদিকের সিঁড়ির পথদিয়ে নামা সহজ, তবে ইচ্ছা অনুযায়ী পথ ব্যবহার করতে পারবেন। এখানে সীতা মন্দিরের কাছে আরও একটি শুকনো ঝর্ণা আছে, অন্য ঝর্ণা গুলো পাহাড়ের গভীরে অবস্থিত।বর্ষাকালে বৃষ্টিতে স্নাত পাহাড়গুলির সৌন্দর্য আরো বেড়ে যায় আর দেখতে পূর্ণ যৌবনা মনে হয়। কিন্তু বর্ষাকালে পাহাড়ে উঠা খুবই বিপদজনক।
ইকোপার্ক
সীতাকুণ্ড বাজার হতে ২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্হিত সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেন। ফকিরহাট বাজার থেকে পায়ে হেঁটে মাত্র ১০ মিনিটেই পোঁছানো যায় ইকোপার্কে। আমাদের দেশের প্রথম ইকো পার্ক এটি। পার্কের মুল ফটকে এলে পাওয়া যায় প্রবেশ টিকিট। পার্কের মুখেই রয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের সু-ব্যবস্থা। ইকোপার্কের অন্যতম মূল আকর্ষন হলো প্রাকৃতিক ঝর্ণা ও হাজারো দুর্লভ প্রজাতির বৃক্ষরাজি। পার্কের চুড়া থেকে সোজা পশ্চিমে তাকালে দেখা যায় বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউ। পার্ক থেকে কিছু দূরে মাত্র কয়েক কিঃমি পশ্চিমে এই সমুদ্র হওয়ায় বিকেলে পর্যটকরা বেশিরভাগই এখানে এলে সমুদ্রে সূর্যাস্ত দেখে যান। পাহাড় ও সমুদ্র এর নয়নাভিরাম দৃশ্যে চোখ জুড়িয়ে যায়। পাহাড়ী আঁকা-বাঁকা পথের বাঁকের সবুজ অরণ্য মনে জায়গা করে নেয়। আর সীতাকুণ্ড ইকোপার্কের ভেতরের যে সোন্দর্য্য এক কথায় অপরুপ। এখানে রয়েছে দুর্লভ প্রজাতির গোলাপ বাগান, অর্কিড বাগান, পদ্ম পুকুর, ভ্যালি ব্রীজ, প্রাকৃতিক হ্রদ, চোখ জুড়ানো ঝর্ণা, আর হাজারো পাখির কলতান। কপাল ভালো হলে দেখা পেতে পারেন বাঁদর, নানারকম মায়া হরিণ সহ কয়েক প্রকার বণ্য প্রাণীরও।
বাঁশবাড়ীয়া সীবিচ
সীতাকুন্ড বাজার থেকে সাড়ে ৪ কিঃমিঃ দক্ষিনে বাড়বাকুণ্ড বাজার এর অবস্থান। বাজার থেকে প্রায় ১ কিঃমিঃ পূর্বে পাহাড়ে রয়েছে গরম পানির ঝর্না। বাড়বকুণ্ড বাজার থেকে আরো ৩কিঃমিঃ দক্ষিনে অবস্হিত বাঁশবাড়িয়া বাজার। বাঁশবাড়িয়াতে পাহাড়ে দেখতে পাবেন অনেক রাবার বাগান। আর বাঁশবাড়িয়ার সমুদ্র সৈকত এ আনন্দ নিতে পারবেন বেশ। বাঁশবাড়িয়া থেকে আরো দক্ষিনে গেলে দেখতে পাবেন জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প।
অন্যান্য
এখানে রয়েছে সহস্রধারা আর সুপ্ত ধারা নামের দু’টি জলপ্রপাত। মীরসরাই অংশে রয়েছে খৈয়াছড়া, হরিণমারা, হাটুভাঙ্গা, নাপিত্তাছড়া, বাঘবিয়ানী, বোয়ালিয়া, অমরমানিক্যসহ আরো অনেক অনেক ঝর্ণা ও জলপ্রপাত। পূর্বদিকে এই পাহাড় থেকে উৎসারিত হয়ে কয়েকটি ঝর্ণা তথা খাল হালদা নদীতে গিয়ে মিলিত হয়েছে। এর মাঝে গজারিয়া, বারমাসিয়া,ফটিকছড়ি, হারুয়ালছড়ি এবং বোয়ালিয়া অন্যতম।
আসলে সীতাকুণ্ডে ভ্রমনের জায়গা এত বেশি যে ৩ দিন সময় নিয়ে না আসলে সব কিছু ভালভাবে না দেখেই চলে যেতে হবে।
থাকাখাওয়া ও যাতায়াত
সীতাকুণ্ডে সায়মন হোটেল নামে আবাসিক হোটেল রয়েছে। এটি সীতাকুণ্ড বাজারের ঠিক পাশেই আবস্হিত। মান খারাপ না মোটামুটি । এছাড়া ইকেপার্কের রেস্ট হাউস এ ও থাকতে পারেন। প্রায় সব ধরনের খাবার দোকান কিংবা রেস্তোরাঁ পাবেন,তাই খাওয়াদাওয়া নিয়ে তেমন চিন্তা করতে হবে না।
ঢাকা থেকে সব ধরনের গাড়িতে করে সীতাকুণ্ড আসা যায়। বাসে আসলে সরাসরি সীতাকুণ্ড নেমে যেতে পারবেন। চট্টগ্রাম শহর থেকে আসতে হলে একেখান মোড় থেকে বাস এবং সিটি গেইট থেকে সিএনজিতে করে সীতাকুণ্ডে আসা যায়। গাড়ি রিজার্ভ করার জন্য দরদাম করে নেয়াই ভালো।
No comments